মার্কেটিং (Marketing) শব্দটি আমাদের কাছে যত বেশি পরিচিত তার চেয়ে বেশি অপরিচিত হচ্ছে মার্কেটিং আসলে কি জিনিস. সাধারণের কথায় বলতে গেলে আমাদের চারপাশের এমন কোনো জিনিস নেই যাতে মার্কেটিংয়ের ছোঁয়া নেই.
কিন্তু অপ্রিয় সত্য হচ্ছে মার্কেটিং বলতে আমাদের দেশে অধিকাংশই মনে করেন বিক্রয় কিংবা সেলস (sales) এর কাজ. কিন্তু মার্কেটিংয়ের ধারণা অনেক ব্যাপক. সাধারণ বইয়ের ভাষা দিয়ে আসলে মার্কেটিংকে সংজ্ঞায়িত করা অনেক কঠিন কাজ.
মার্কেটিং বিষয়টি মূলত দুইটি কাজ করে – ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট (demand management) এবং কাস্টমার ম্যানেজমেন্ট (customer management).
ডিমান্ড (Demand) কিংবা চাহিদা বজায় রাখতে হলে যা যা করার দরকার সবই মার্কেটিংয়ের আওতা ভুক্ত. আবার কাস্টমার কিংবা গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে যা যা করার দরকার তার সবই মার্কেটিংয়ের আওতাভুক্ত.
ডিমান্ড ম্যানেজমেন্টের মধ্যে অনেক রকম কাজ রয়েছে যেমন মার্কেট এনালাইসিস, ডিমান্ড ফোরকাস্টিং, প্রোডাকশন ইত্যাদি.
আবার কাস্টমার ম্যানেজমেন্টের মধ্যে রয়েছে ব্র্যান্ডিং, প্রমোশন, কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি.
মোটামুটি, একটি পণ্যের কিংবা সেবার শুরু থেকে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে যত রকম কর্মকান্ড রয়েছে তার সবকিছুর সমষ্টি হচ্ছে মার্কেটিং. সেলস কিংবা বিক্রয় সেই ক্ষেত্রে কেবল মাত্র একটি কর্মকান্ড মার্কেটিংয়ের অনেকগুলো কর্মকান্ডের মধ্যে থেকে.
আবার অনেকে মনে করেন মার্কেটিংয়ের মূল কাজ হচ্ছে সেলস (sales) কিংবা বিক্রয়. বিক্রয় বাড়লে প্রতিষ্টানের মুনাফা বাড়ে. অনেক সময় এই বিষয়টিকে শেয়ার অফ মার্কেটও (share of market) বলা হয়ে থাকে।
কিন্তু মূল ব্যাপার হচ্ছে বিক্রয় দিয়ে একটি প্রতিষ্টান অনেক দূরে যেতে পারে না. এক কথায় বলতে গেলে, শুধু সেলস বাড়ালেও কোম্পানি টিকে থাকবে বিষয়টি এমন নয়।
একটি প্রতিষ্টানের টিকে থাকার জন্য দরকার ব্র্যান্ডিং (branding), যাকে মার্কেটিংয়ের নিউক্লিয়াস বললেও ভুল হবে না.
বাজারে একটি পণ্য অনেকগুলো কোম্পানি তৈরী করে. কিন্তু গ্রাহক কিংবা কাস্টমারের নিকট সেই পণ্যটিই প্রাধান্য প্রায় যার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে কাস্টমারদের কাছে.
ধরুন বাজারে আইফোন (iPhone) এবং গ্যালাক্সি (Galaxy) দুটোই অনেক জনপ্রিয়. কিন্তু যার কাছে আইফোনই সব তার কাছে আপনি হাজার চেষ্টা করেও গ্যালাক্সি বিক্রয় করতে পারবেন না।
আবার যার কাছে গালাক্সিই সব তার কাছে আপনি হাজার চেষ্টা করেও আইফোন বিক্রয় করতে পারবেন না. এই ক্ষেত্রে প্রমোশন কিংবা প্রচার এবং প্রসার কৌশলের কোনো মূল্য নেই. এই মুলে আছে গ্রহণযোগ্যতা (acceptance)।
আবার ধরুন আপনি একজন ডিজিটাল উদ্যোক্তা. আপনি এমন একটি app তৈরী করেছেন যা দিয়ে মানুষ ঘরে বসেই বেশকিছু সাধারণ রোগ নির্ণয় করতে পারবে।
এখন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনি কোনটি বেছে নিবেন – app এর ইনস্টলেশন বাড়ানো না apps এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করা। এক্ষেত্রে আপনি যদি স্বল্প সময়ের চিন্তা (short-term perspective) করেন তাহলে app এর ইনস্টলেশন বাড়ানোই হবে আমার অভিপ্রায়। কিন্তু আপনি যদি মনে করেন যে আপনাকে বাজারে টিকে থাকতে হবে তাহলে আপনি app এর গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধির উপর মনোযোগ দিবেন যা মূলত দীর্ঘ-মেয়াদি চিন্তার অংশ।
এরপর আসা যাক স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর কথায়. স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো মূলত এমন একটি সরু রাস্তায় চলে যার এক পাশে রয়েছে চির সবুজ প্রকৃতি আর ওপর পাশে রয়েছে নদী।
অনেকগুলো স্টার্টআপই আজকাল শুরু হয়, কিন্তু টিকে থাকে খুব কম। স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর টিকে থাকার মুলেও রয়েছে হার্ট অফ শেয়ার অর্জনের প্রচেষ্টা. কেবল সেলস ফিগার বাড়লেই বাজারে টিকে থাকা সম্ভব নয় বরং গ্রাহকদের কাছে নিজেদের নাম পৌঁছাতে পারলেই সফল হওয়া যায়। আর এই গ্রহণযোগ্যতা তখনিই আসবে যখন আপনি কাস্টমারদের মন জয় করতে পারবেন. এই জিনিসটিকে শেয়ার অফ হার্টও (share of heart) বলা হয়ে থাকে।
তাই আমাদের দেশে যে ধারণা রয়েছে যে সেলস কিংবা বিক্রয় হচ্ছে মার্কেটিং আর সেলস বাড়লেই কোম্পানির জন্য মঙ্গলকর এই ধারণাটির সম্পর্কে চিন্তা করার বিষয় এসে গিয়েছে। প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে দরকার গ্রাহকদের মন জয় করা, বিক্রয়ের অংক বাড়িয়ে নয়।
মার্কেটিংয়ের মূল কাজই হচ্ছে শেয়ার অফ হার্ট বাড়ানো শেয়ার অফ মার্কেট নয়. তাই আধুনিক মার্কেটিংয়ের সংজ্ঞা হচ্ছে –
Marketing is all about increasing share of heart. Share of heart is the invisible connection between the product or service or even company and the customers. – Nur-Al-Ahad
Nur-Al-Ahad
BBA (University of Dhaka, Bangladesh) 14th Batch
MBA (University Putra Malaysia, Malaysia)
Master of Engineering (Toyohashi Tech, Japan)
Email: nur.al.ahad.mkt@gmail.com
This article was published in the publication of Bangladesh Marketing Day 2019.