একটা সময় ছিলো লাখ লাখ টাকা খরচ করে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন দেয়া ছাড়া গত্যন্তর ছিলো না। টিভি চ্যানেলগুলোতে বিজ্ঞাপনের রেট প্রায় আকাশচুম্বি, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের একটা বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কত টাকা দিতে হয় সেটা অনেকেরই জানা। রেডিও এবং পত্রিকার অবস্থাও প্রায় তথৈবচ।
সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে বিকল্প ধারার মিডিয়া তৈরী হয়েছে মুটামুটি গত শতকেই। তার সুবাতাস এই দেশেও বইবে এক সময়, এইরকম ভবিৎষদ্বানীও করেছিলাম বছর কয়েক আগে। সেই হিসেবে ফেসবুক আর ইউটিউবের মত সোশ্যাল মিডিয়াগুলো একটা সময়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতা ও বিজ্ঞাপন দাতা – উভয়ের জন্যই আর্শিবাদ হয়ে উঠলো। কেননা, টিভি চ্যানেলে প্রচারিত বিজ্ঞাপনের চাইতে ফেসবুকে প্রচারিত বিজ্ঞাপন অনেক বেশী সস্তা, কার্যকর এবং আধুনিক। এখন তো সোশ্যাল মিডিয়াতে বিজ্ঞাপন প্রচার করা রেডিও চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার করার চাইতেও সস্তা, অথচ অনেক বেশী সুফলদাতা।
সবচাইতে বড় কথা হলো, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপনে কোন সময়সীমা নাই, যেখানে টিভি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনে প্রতি সেকেন্ডেই পয়সা দিতে হয়। তার উপর আবার থাকে পিক/ অফপিক টাইমের বিষয়টাও। ওভিসি বা Online Video Commercial গুলোর জনপ্রিয়তা এই কারণেই দিনকে দিন বাড়ছে বৈ কমছে না।
আবার প্রিন্ট মিডিয়াতে বিজ্ঞাপনের জন্যও কাগজের জায়গা অনুযায়ী টাকা দিতে হয়। কিন্তু ফেসবুক বড়জোর তাদের পিক্সেল (ছবির রেজুলেশন বা ভিডিও ফরম্যাট) এর মাপ বলে দিবে। কিন্তু পার পিক্সেল চার্জ করবে না, যেমনটা প্রিন্ট বিজ্ঞাপনে প্রতি ইঞ্চির জন্য টাকা দেওয়া লাগে আর কি! অনলাইনে যেটাকে বলা হয় ”পিক্সেল”), তাদের বলে দেয়া মাপ আপনি অনুরসরণ না করলে আপনাকে কোন ধরনের বাড়তি পয়সাও দিতে হবে না, (তবে হ্যাঁ, ফেসবুক কর্তৃক বেঁধে দেয়া পরিমাপ না মানলে আপনার বিজ্ঞাপনের ইমপ্রেশন কমে যাবে।)
সোশ্যাল মিডিয়ার আরেকটা বড় সুবিধা হলো, তারা আপনার স্বার্থেই অ্যাডকে অপটিমাইজ করে। অর্থাৎ, ঠিক কোন কাজটা করলে একজন বিজ্ঞাপনদাতার বিজ্ঞাপন তার গ্রাহকের কাছে আরো বেশী গ্রহণযোগ্য হবে, সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আপনাকে মুটামুটি বাধ্য করা হবে। যেমনঃ বিজ্ঞাপনে মাত্রাতিরিক্ত কপি থাকলে ফেসবুক সেই অ্যাড প্রকাশ ও প্রচার করে না। যতক্ষন না আপনি অ্যাড কপি কমিয়ে নতুন করে আবার প্রকাশ করার জন্য জমা না দিচ্ছেন, ততক্ষন পযন্ত সে ঐ অ্যাডকে প্রত্যাখান করতে থাকবে। টিভি-রেডিও চ্যানেল কি জীবনে কখনো এই ধরনের কোন কাজ করেছে? আপনি কড়ি ফেলবেন, বিনিময়ে ওরা বিজ্ঞাপন প্রচার করে দিবে। সেটা কত লোকের কাছে গ্রহণযোগ্য হলো, কিংবা আদৌ গ্রহণযোগ্য হলো কিনা, তা নিয়ে মাথা ব্যথা নেই।
টিভি কর্মাসিয়াল বানাতে এমনিতেই প্রচুর পরিমান পয়সা খরচ হয়। তার উপর টিভি চ্যানেলগুলোকে স্রেফ প্রদর্শন করা বাবদ যে পরিমান টাকা দিতে হয়, সেটা দিয়ে কিন্তু আরো বিজ্ঞাপন বানানো সম্ভব। সে তুলনায় লগ্নিকৃত টাকা ছোট ও মাঝারি আকারের বিজ্ঞাপনদাতারা কতটুকু ফিরে পান, সেটা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।
অপরদিকে ফেসবুক বিনামূল্যে আপনার বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করার সুযোগ দিচ্ছে। এবং আপনি চাইলেই কিছু ডলারের বিনিময়ে আপনার সেই বিজ্ঞাপনের অডিয়েন্সকে নিয়ে যেতে পারছেন প্রায় টিভি চ্যানেলের সমান। মানে টিভিতে প্রচার করলে যতগুলো লোক দেখতো, প্রায় ততগুলো লোক। তার চাইতেও বড় কথা হলো, আপনি আপনার অডিয়েন্স ক্যাটাগরি নির্বাচন করে দিতে পারছেন, যেটা টিভিতে সম্ভব নয়। অর্থাৎ কিনা, টিভি চ্যানেলগুলোর মত স্রেফ প্রচার করার জন্যই টাকা নিচ্ছে না। নিচ্ছে বেশী লোকের কাছে তা পৌছেঁ দেবার জন্য।
আমি নিজে গত কয়েক বছর ধরে খেয়াল করে দেখছি, এই অল্টারনেটিভ অ্যাডভারটাইজিং প্লাটফর্মটা খুব বেশী রকমের দ্রুতগতিতে জনপ্রিয় এবং কার্যকারী হচ্ছে। এমনকি শুধু বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই নয়, বিনোদনমূলক সেবাখাতেও এটি বেশ শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে।
এই কারণেই, গত কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র “ফেসবুক এবং ইউটিউব” কে টার্গেট করে প্রকাশিত নাটক/টেলিফিল্ম/শর্টফিল্ম ইত্যাদি প্রকাশ হচ্ছে অহরহ। অনেক নাটক/সিনেমা আগে প্রকাশিত হচ্ছে অনলাইনে (ফেসবুক ও ইউটিউবে), তারপর অফলাইনে (টিভি চ্যানেলে)। এমনকি আমাদের দেশে গত বছর থেকে উল্লেখযোগ্যরকম জনপ্রিয়তা পেয়েছে ”ওয়েব সিরিজ”-ও! এসব নতুন চর্চা তরুণ নির্মাতাদের জন্য রীতিমতো আর্শিবাদসরূপ। এখন অনেক কম খরচে একটা নাটক নামিয়ে ফেলা যাচ্ছে, যার ফলে প্রডিউসার যোগাড় করার জন্য জুতার সুখতলি ক্ষয় করতে হচ্ছে না, আগে যেমনটা করতে হতো আর কি।
শুধু তাই নয়, নাটক বানাবার পর টিভি চ্যানেলের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেও হচ্ছে না বিক্রি করার জন্য। আমি মনে করি, এতে করে একজন পরিচালক তার মূল কাজে আরো বেশী করে মনোনিবেশ করার সুযোগ পাচ্ছেন, নাটকের মান নিয়ে আরো বেশী ভাবার সুযোগ পাচ্ছেন, নিত্য-নতুন ধরন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেন যেটা তার দক্ষতাকে আরো বাড়াচ্ছে বৈ কমাচ্ছে না। এন্টারটেইনমেন্ট সিগমেন্টে সোশ্যাল মিডিয়া অল্টারনেটিভ প্লাটফর্ম হিসেবে আবিভূত না হলে এটা সম্ভব ছিলো না।
বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আগের তুলনায় অনেক অনেক বেড়েছে, অপরদিকে ব্যান্ডইউথদও আগের চাইতে সস্তা হয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরই এদিকটায় নজর দিয়েছিলেন। যার ফলে, প্রত্যন্ত গ্রামের দিককার মানুষও এখন ফেসবুক ও ইউটিউবের ভিডিও স্ট্রিমে প্রবেশ করতে পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বাড়ছে এই বিকল্প ধারার মিডিয়ার জনপ্রিয়তা। এবং আমি বাজী ধরে বলতে পারি, এই প্রবণতা দিনকে দিন বাড়বে বৈ কমবে না। এবং ভবিৎষতে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা টিভি চ্যানেলের চাইতে বেশী গুরুত্ব দিবেন এই বিকল্প ধারার অনলাইন মিডিয়া প্লাটফর্মের দিকে। আমার ধারনা, এখন দুটো সমানতালে প্রতিযোগীতা করছে, কিন্তু অচিরেই এমন দিন আসবে যখন বিজ্ঞাপনদাতা ও বিজ্ঞাপন নির্মাতারা শুধুমাত্র ডিজিটাল মিডিয়ার দিকেই ঝুকঁবেন। টিভি বিজ্ঞাপন হয়ে যাবে বড় ব্র্যান্ডগুলোর জন্য স্রেফ স্ট্যাটাস সিম্বল। কিংবা হয়তো পুরোপুরি হারিয়েও যেতে পারে, কে জানে?
টিভি চ্যানেলের আরেকটা সীমাবদ্ধতা হলো, সেখানে বিজ্ঞাপন প্রচারের পর আর কোন বাড়তি ভ্যালু যুক্ত হয় না। মানে একবার প্রচার হয়ে গেলেই শেষ। অপরদিকে অনলাইনে বিজ্ঞাপন প্রচারে রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা! ওখানে একবার প্রচার হয়ে গেলেই শেষ হয়ে যায় না। নিজের ইচ্ছেমতো যতবার খুশী দেখা যায়, বন্ধু বান্ধবদের সাথে শেয়ার করা যায়, নিজের ইচ্ছেমতো আর্কাইভ রাখা, কমেন্টের মাধ্যমে দর্শকদের নিরপেক্ষ মতামত জানা যায়, কত লোকের কাছে পৌছঁলো তার রিয়েল-টাইম সচিত্র পরিসংখ্যানও দেখা যায়, ইত্যাদি।
সঙ্গতকারণেই এই কাজগুলো টিভি বা প্রিন্ট মিডিয়াতে সম্ভব নয়। বলা বাহুল্য, টিভি চ্যানেলগুলো তাদের বিজ্ঞাপনদাতাদের একইরকম কোন ভ্যালু এডেড সেবা না দিলে অচিরেই অনলাইন প্লাটফর্মের চাইতে পিছিয়ে যাবে। তারা যদি ভাবে যে, বিজ্ঞাপনদাতারা এখন তাদের বিজ্ঞাপন “শুধুমাত্র প্রচার করেই” সন্তুষ্ট থাকবে, তাহলে চ্যানেলওয়ালারা বিরাট ভুল করবে। আমার মনে হয়, এখনই এই ব্যাপারে একটা কাযকর পদক্ষেপ না নিলে পরবর্তীতে চড়া মাশুল দিতে হতে পারে তাদের।
টিভির অডিয়েন্স রিচ অনেক বেশী বটে, কিন্তু টার্গেট অডিয়েন্সের বিচারে ফেসবুক বা Google AdWords এর মতো সেবাগুলোর কাছে মার খাবে কনফার্ম। আমি কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করে এমন লোকদের আমার বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছি, যারা আসলে না দেখলেও আমার ব্র্যান্ড বা বিক্রি-বাট্টার কিছু যায় আসে না। অপরদিকে এমন লোকদের বঞ্চিত করছি, যাদেরকে দেখালে হয়তো আমার পণ্যের বিক্রি বাড়তো, ব্রান্ড ভ্যালুও বাড়তো।
সুতরাং, এক্ষেত্রে টার্গেটেড অডিয়েন্সের কোন বিকল্প নেই যেটা আমাকে সনাতন ধরার মিডিয়া দিতে পারছে না। যেদিন দেশের সব কয়টা গ্রামে-গঞ্জে লোকের হাতে হাতে ব্রডব্যান্ড থাকবে, সেদিন সনাতনী মিডিয়াগুলো যে আরো বেকায়দায় পড়বে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
অপরদিকে, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের উত্থান সামাজিক মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও আধুনিক করেছে, এবং এই প্রযুক্তিকে ক্রমান্বয়ে উন্নততর করা হচ্ছে। আমার মনে হয়, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সবচাইতে বুদ্ধিদীপ্ত বিষয় হচ্ছে, ”গুগল ডিসপ্লে নেটওয়ার্ক।” মানে আপনি কোন কিছু গুগলে সার্চ করলেন, এরপর ঐ পন্য কেনার জন্য আপনি অনলাইন দুনিয়ার যেখানেই যান না কেন, সেই পন্যের বিজ্ঞাপন আপনার পিছু ছাড়বে না। এবং আপনি তাতে বিরক্তও হবেন না। পেইড ক্যাম্পেইনের এটি খুবই কার্যকরী একটা পদ্ধতি।
এই ডিসপ্লে নেটওয়ার্কে গ্রাহকের অ্যাড দিয়ে আমাদের দেশের ফ্রি ল্যান্সাররা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছেন। ইতিমধ্যেই এই খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার শুরু করেছে গুগল ও বিং এর মতো সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্টগুলো। একটা সময় হয়তো দেখা যাবে, আপনি কোন কিছু মনে মনে কিনবেন বলে কল্পনা করেছেন, কিংবা স্বপ্নে দেখেছেন রাতে। সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল হাতে নেওয়ামাত্র দেখবেন আপনার চোখের সামনে সেই পণ্যের বিজ্ঞাপন। আমার ধারনা, আমার জীবদ্দশাতেই এই দৃশ্য দেখে যেতে পারবো।
দেশের নামকরা এক টিভি চ্যানেলে চাকুরী করা আমার একজন ফেসবুক বন্ধু কিছুদিন আগে জানালেন, “বিকল্প গণমাধ্যম বিষয়টা আমাদের দেশের মত বিশ্বের অনেক দেশে এখনও ‘উন্নয়নশীল’ পর্যায়েই আছে। অবশ্য সময়ের সাথে সাথে সেই অবস্থাও পাল্টাচ্ছে। যেমনঃ আগে ইউটিউবে অ্যাড ছিলো না। তারপর অ্যাড এলো, তবে আপনি চাইলেই সেটাকে এড়িয়ে যেতে পারতেন। কিন্তু এখন আপনাকে প্রথম ৩/৪ সেকেন্ড সেটা দেখতেই হবে, এড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। ইদানিং তো ক্ষেত্রবিশেষে পুরো এ্যাডটাকেই দেখতে বাধ্য করা হচ্ছে। অর্থাৎ, মানুষ যতই বিকল্প গণমাধ্যমের দিকে ঝুঁকবে, সেখানেও ততই অ্যাডের পরিধি বাড়বে।
তবে হ্যাঁ, সেটা প্রচলিত গণমাধ্যমের মতো যন্ত্রণাদায়ী হবে না। কারণ, বিকল্প গণমাধ্যম ব্যবহারকারীরাই খোদ বিনিময় বস্তু। টিভি চ্যানেলের যেমন চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে শুধুমাত্র বিজ্ঞাপন প্রচার করেই টাকা কামানো, সোশ্যাল মিডিয়াগুলোর অনেক সময় চূড়ান্ত লক্ষ্য থাকে গ্রাহকদের ব্যাপারে বিপুল পরিমান তথ্য সংগ্রহ করা, যেটা তারা পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে বিক্রি করতে পারে। টাকার মতো ব্যবহারকারী নিজেই গুগল ফেসবুক বা ইউটিউবকে জ্বালানী দিচ্ছে। যেমন ধরুন, আপনি গুগল/ফেসবুকে জুতার ডিজাইনের সার্চ দিলেন। এবার খেয়াল করে দেখবেন আপনাকে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে কিংবা ফেসবুকের ফিডে জুতা সম্পর্কিত নানা ধরনের পন্যের বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে (যেটাকে আপনি ”ডিসপ্লে নেটওয়াক” বল্লেন)। অর্থাৎ ও জেনে গেছে আপনার এই মূহুর্তে কোন পন্যটার প্রয়োজন। মানে আপনি নিজেই নিজের তথ্য দিয়ে তাকে বিজ্ঞাপনের রাস্তা বাতলে দিচ্ছেন। এর ফলে ঐ ধরনের বিজ্ঞাপনগুলো কখনই আপনার বিরক্তের উদ্রেক করবে না। বাংলাদেশে টিভি বিজ্ঞাপন সামগ্রিক পদ্ধতিটা আদতে ‘হাওয়া বাতাসে’ চলে।’পে চ্যানেল’ না হওয়ায় টিআরপি পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার নেই। বিজ্ঞাপনি সংস্থা বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের সাথে টিভি চ্যানেল কর্তৃপক্ষের যোগাযোগের ওপর ভিত্তি করেই অ্যাড দেয়া হয়। মার্কেট স্টাডি, কাস্টমার সেগমেন্টেশন, বাজার জরিপ এগুলোও মাঝে সাজে হয়, তবে এতটা ব্যাপকভাবে না।”
অনেকের মতে, একটা ব্র্যান্ডের পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সনাতনী টিভি অ্যাডসহ সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে যে ম্যাস মিডিয়া রয়েছে, তার কোন বিকল্প নেই। এই বক্তব্যের সাথে আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। তবে কথা হলো, এই “ম্যাস মিডিয়ার” সংজ্ঞাটাই আমূল বদলে যেতে শুরু করেছে। একটা সময় ম্যাস মিডিয়া বলতে পত্রিকা আর রেডিওকেই লোকে বুঝতো, তারপর এদের সাথে যুক্ত হলো টেলিভিশন প্রযুক্তি। আগামী দশকে হয়তো এর সাথে যুক্ত হবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোও।
কিংবা এমনও হতে পারে, টেলিভিশন বিজ্ঞাপন হ্রাস পাবে না, তবে সনাতনী ধরনটা আর আগের মত থাকবে না। যেমনঃ টিভি চ্যানেলের চাইতে এখন সাবক্রিপশন ভিত্তিক অন-ডিমান্ড বিনোদনমূলক সেবার দর্শক বেশী। আর ক্রেতা যেখানে, বিজ্ঞাপনদাতারা সেখানেই বিজ্ঞাপন দিবে। সেই সূত্র মোতাবেক, কিছুদিন পর হয়তো নেটফ্লিক্স কিংবা হুলোতেও আমরা বিজ্ঞাপন দেখতে পাবো। কিন্তু যেহেতু তাদের ক্রেতারা প্রতি মাসে সাবসক্রিপশন ফি দিচ্ছেন, সেহেতু তারা মোটা দাগে বিজ্ঞাপন দেখাতে পারবে না। সূক্ষভাবে দেখাবে, এমনভাবে যাতে করে দর্শকরা সেটাকে বিজ্ঞাপনই ভাববে না, ভাববে তার প্রয়োজনের সময় বরং উপকার করে দিয়ে গেলো, গুগলের ব্যাপারে আমরা যেমনটা ভাবি আর কি!
গুগলকে লোকে সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে চেনে, অথচ এই কোম্পানিটি শুধুমাত্র তার বিজ্ঞাপনখাত থেকে প্রতি বছর যে পরিমান অর্থ আয় করে থাকে, পৃথিবীর আর কোন এ্যাড এজেন্সি কিংবা টিভি চ্যানেল কিংবা অন্য কোন কোম্পানি এতটা করে না, করতে পারে না। সে হিসেবে গুগলের তো এ্যাড কোম্পানি হিসেবেই পরিচিতি পাবার কথা ছিলো, সার্চ ইঞ্জিন সেবাদাতা কোম্পানি হিসেবে নয়। ডিজিটাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপনের ধারনাটাও এভাবে শুরু হয়েছিলো যে, এমনভাবে এটিকে প্রচার করা হবে, যাতে করে গনমানুষ এটাকে স্রেফ বিজ্ঞাপন হিসেবে দেখবে না, দেখবে সমস্যার সমাধান হিসেবে।
This article was also published on the 4th Marketing Day (2021) Publication.