Brand

ব্র্যান্ড হারিয়ে যায় কেন?

ব্র্যান্ড হারিয়ে যায় কেন? 1

যদি খেয়াল করে দেখি তাহলে একটা জিনিস খুব ভালোভাবে চোখে পরবে; সেটা হলো আমাদের দেশীয় ব্র্যান্ড আছে হাতে গোনা, অথচ আরো অনেক বেশি ব্র্যান্ড থাকার কথা ছিলো। আমাদের অনেক কোম্পানি আছে কিন্তু সেই কোম্পানি গুলো ব্র্যান্ডে পরিনিত খুব একটা হয়না। আবার হলেও দেখা যায় কিছুদিন পর আর খুঁজেই পাওয়া যায়না।

আমাদের দেশের বেশিরভাগ ব্র্যান্ড বা কোম্পানি তাদের সেলসের দিকে বেশি মনোযোগ দেয় যার ফলে দেখা যায় বছর শেষে অনেক মুনাফা আসে। আর সেই মুনাফায় তারা খুশি থাকে। কিন্তু ব্র্যান্ড ভ্যালু বলে যে একটা কথা আছে সেটা উনারা কানেই নেন না বা মাথাতেই রাখেন না ফলে যা হবার তাই হয়। কয়েক বছর পর শোনা যায় অমুক ব্র্যান্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হবার পর উনারা মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকেন যে কেন বন্ধ হলো? অথচ এটা আগে ভেবে যদি ব্র্যান্ড হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করতেন তাহলে আর বন্ধ করে দিতে হতোনা।

একটা ব্র্যান্ড নিজের সন্তানের মত, আপনি তাকে যেভাবে লালন পালন করবেন সেভাবেই সে বেড়ে উঠবে। আপনি যদি সব কিছু বাদ দিয়ে শুধু রেজাল্ট আশা করেন তবে ভালো রেজাল্ট পাবেন ঠিকই কিন্তু একজন পরিপূর্ণ মানুষ পাবেন না। ঠিক তেমনিভাবে শুধু সেলস চাইলে সেলস পাবেন কিন্তু ব্র্যান্ড ইমেজ, পজিশন এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু পাবেন না। অনেকেই মনে করেন যে শুধু সেলস দিয়েই মার্কেটে টিকে থাকা যায়। সেলস দিয়ে আপনি হয়ত টিকে থাকতে পারবেন তবে একটা ব্র্যান্ড হিসেবে কখনই পজিশন পাবেন না। আরেকটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে সেটা হলো – সময়ের সাথে সাথে আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং কাস্টমারের সাইকোলজি বুঝতে হবে নয়ত একসময়ের টেকি জায়ান্ট মোবাইল নির্মাতা নোকিয়ার মত হারিয়ে যেতে হবে।

অনেক কথা হলো, এবার অল্প কথায় জেনে নেয়া যাক যে একটা ব্র্যান্ড কি কি কারনে হারিয়ে যেতে পারে।

১। নিম্নমানের পন্য মার্কেটে ছাড়লে কিছুদিন হয়ত ব্র্যান্ড ইমেজের কারনে চলবে কিন্তু মানুষ এত টাকা দিয়ে খুব বেশিদিন এই পণ্য কিনবে না। মার্কেটে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের অনেক পণ্য আছে বা আসছে প্রতিনিয়ত সুতরাং বাজে পণ্য দিয়ে শুধু ব্র্যান্ড নাম দিয়ে চলা মুশকিল। শক্তিশালী ব্র্যান্ড ইমেজের সাথে সাথে ভালো পণ্য উৎপাদন করতে হবে।

২। আপনি একাই পুরো মার্কেট দখল করতে পারবেন না কারণ আপনার মত আরো অনেক ব্র্যান্ড আছে তাইনা? সুতরাং আপনার সেই পণ্য ভালো মানের এবং মার্কেটে চাহিদা আছে সেটা নিয়েই কাজ করুন। সব কিছু নিয়ে মার্কেটে আসার দরকার নেই। স্যামসাং তার মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ দিয়ে ভালোভাবেই মার্কেট ধরে রেখেছে কিন্তু ক্যামেরা এবং শীতাতপ যন্ত্র বা এসি নিয়ে তেমন বলার মত কিছু করতে পারেনি সুতরাং স্ব কিছুর পেছেন ছোটার দরকার নেই।

৩। আপনার ব্র্যান্ডের উপর বিশ্বাস করেই কিন্তু মানুষজন চোখ বন্ধ করে আপনার পণ্য কিনছে। সুতরাং তাদের সেই বিশ্বাসটা ভাংবেন না। হাতির কথা বলে ঘোড়া বিক্রি করার চেষ্টা করবেন না কারণ আপনার মত অনেকেই মার্কেটে আছে যারা ঘোড়া বলে ঘোড়াই বিক্রি করবে সুতরাং সাবধান।

৪। সারাক্ষণ ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকবেন না আপনার পণ্য নিয়ে কারণ মানুষ বার বার একটা জিনিস দেখতে চায়না, বিরক্ত হয়। আপনি নিজেও বিক্রত হন সুতরাং যতটুকু দেখানো দরকার তাই দেখান। বেশি দেখালে দেখবেন আপনার ব্র্যান্ড ছেড়ে অন্য ব্র্যান্ডে চলে গিয়েছে।

৫। সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাহিদা, সাইকোলজি এবং আধুনিক প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে মানিয়ে নিতে হবে। নয়ত নোকিয়া, মাই স্পেস, ইয়াহুর মত হারিয়ে যেতে হবে।

৬। পণ্য বিক্রি করার পর বা কোন সেবা দেয়ার পর যদি সঠিকভাবে সেবা দিতে না পারেন তবে খুব বেশিদিন মার্কেটে টিকতে পারবেন না। এয়ার ইন্ডিয়ার মত ব্র্যান্ড সঠিকভাবে সেবা দিতে না পারার কারনে হারিয়ে যাওয়ার পথে। সুতরাং শুধু ব্র্যান্ড ভ্যালু আর পণ্য বিক্রি করেই টিকে থাকা সম্ভব নয়, মানসম্মত সেবাও দিতে হবে।

আরো অনেক কারণ আছে তবে আমি এই কয়েকটা বললাম। একটা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে হলে শুধু ইমেজ, পণ্য দিয়ে সেটা সম্ভব নয়। সবকিছু মিলিয়ে একসাথে করতে পারলেই মার্কেটে একটা শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব।

Shahriar Neel
the authorShahriar Neel
I’m well-versed left & right brain thinker, so cut me and I bleed content. If you’re interested in grabbing coffee, please send me hi on https://www.linkedin.com/in/shahriar2813/