Quantcast

ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশ – প্রথম আলোর ‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপ

কোনটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ- ব্যবসা নাকি ব্র্যান্ড এই অমিমাংসীত কিন্ত দরকারী প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই ব্র্যান্ড এবং মার্কেটিং পেশাজীবীদের কমিউনিটি ‘ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশ’ এর আয়োজনে এবং প্রথমআলো ডটকম এর সহায়তায় গত ৩০ নভেম্বর ২০১৯ কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে প্রথম আলোর প্রশিক্ষণ কক্ষে ‘বিজনেস ওর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপ গত শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটিতে পাওয়ার্ড বাই স্পন্সর হিসাবে ছিল এস্কিমি এবং মেট্রোসেম।

বাংলাদেশের স্বনামধন্য ব্র্যান্ড ক্যাটালিস্ট আফতাব মাহমুদ খুরশীদ মূল সেসান পরিচালনা করেন। তিনি পরিকল্পিত ব্র্যান্ডিং দীর্ঘ সময়ে ব্যবসাকে বাজারে টিকে থাকার এবং এগিয়ে যাবার জন্যে কিভাবে সাহায্য করে এবং ব্র্যান্ডিং ছাড়া ব্যবসা শুধুই পণ্য বেচাকেনার কারবার হয়ে ওঠে এই বিষয়ে আলোকপাত করেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন ব্যান্ডে সরাসরি কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তিনি ব্র্যান্ড, মার্কেটিং, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীদের করণীয়, চিফ মার্কেটিং অফিসারের দায়িত্ব ইত্যাদি নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। বাংলাদেশে কেন ব্যবসায়ীরা ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে হিমসিম খায় তার কারণ হিসাবে ‘ব্র্যান্ডিং’ কার্যক্রমকে বিনিয়োগ হিসাবে না দেখে খরচ হিসাবে দেখা, রিসার্চে না কাজ করা এবং শর্টটামে যেকোন ভাবে মুনাফা লাভের প্রত্যাশাকে দায়ী করেন আফতাব মাহমুদ খুরশীদ। চরম প্রতিযোগিতামূলক এই বৈশ্বিক পরিবেশে দেশী ব্র্যান্ডগুলো এইকারণেই মার খাচ্ছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। ‘কয়েক কোটি টাকা দিয়ে মেশিন কেনার সামর্থ্য থাকলেও মাত্র কয়েক লাখ টাকা ব্র্যান্ড বিল্ডিং-এ বিনিয়োগের অনীহা এই দেশে অনেক উদ্যোক্তাদের’-জানান তিনি। প্রানবন্ত আলোচনার মাঝেই দেশী-বিদেশী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের উদাহরণসহ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। ‘ক্রেতারা আসলে ব্র্যান্ড কিনে থাকেন, প্রমিজ কিনে থাকেন শুধু পণ্য কিনেন না’- এইসব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে ব্যান্ডের পার্সোনালিটি এবং টার্গেট গ্রুপ বুঝে এগিয়ে যাবার পরামর্শ দেন তিনি।

ওয়ার্কশপে অংশ নেওয়া মার্কেটিং ক্ষেত্রের পেশাজীবী এবং উদ্যোক্তা সবাই একসাথে

‘বিজনেস ওর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপ শুরু হয় মেট্রোসেমে সিনিয়র ব্র্যান্ড ম্যানেজার হুমায়ন মোর্শেদ এর বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গল্প দিয়ে। ব্র্যান্ড নিয়ে ভুল ধারণা, চিফ অফিসারদের এইযুগের সাথে মানিয়ে নেবার প্রয়োজনীতা এবং সময়ের সাথে টিকে থাকতে না পারলে ব্র্যান্ডকে বাজার থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার মত বিভিন্ন প্রয়োজনীয় বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। তারমতে সমসায়মিক ব্র্যান্ড-মার্কেটিং এর বই পড়ার পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সাথে আলোচনা করা, বিভন্ন ইভেন্টে যোগ দেওয়া, মেলা ভিজিট করা এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে আপডেট রাখা জরুরী।

ইনসাইট স্পিকার হিসাবে ডেকো ফুডসের হেড অফ মার্কেটিং আহাম্মদ আলী হাসান বিশ্বের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এগিয়ে যাওয়ার পিছনের কারণগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘যুগের চাহিদার সাথে মিলিয়ে ব্র্যান্ডের টোন এবং পার্সোনালিটি বদলে ফেলার দরকার হলে বদল করাই ভাল। ব্র্যান্ডে স্টিক থাকা ভাল কিন্তু প্রোডাক্টে না কারণ ইনোভেসান এবং ভ্যালু যোগ করে অনেক ব্র্যান্ড দুই তিন যুগ যে সেবা দিত তা থেকে বের হয়ে আরও ক্রেতামুখী হয়েছে, গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে।‘ ব্র্যান্ডের ব্যাপারে ইনসাইট পেতে ৩টি উপায় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। বেশী দাম দিয়ে হলেও ক্রেতারা কেন ব্র্যান্ডের পণ্য ক্রয় করে সেটা ভেবে দেখার জন্যে অংশগ্রহনকারীদেরকে তিনি পরামর্শ দেন।

তিনটি সেসান শেষে তিনজন বক্তা মিলে অংশগ্রহণকারীদের নানা বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে দরকারী দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।

এই আয়োজন নিয়ে প্রথমআলো ডটকমের হেড অফ বিজনেস জাবেদ সুলতান পিয়াস বলেন, “প্রথম আলো দেশের পেশাজীবী এবং তরুণদের এগিয়ে যাবার জন্যে নানাধরণের কাজ করে করে যাচ্ছে। তারই আলোকে ব্র্যান্ড প্র্যাক্টিসনার্স বাংলাদেশ কম্যুনিটির সদস্যদের দরকারী বিষয়ে আরও দক্ষ করে তুলতে অভিজ্ঞ মার্কেটিয়ার এবং ব্র্যান্ড এক্সপার্টদের নিয়ে সেসানে আয়োজনে যুক্ত হয়েছে।“ ব্যবসা এবং ব্র্যান্ডের মত খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তিনি।

ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা মির্জা মুহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, “পরপর দুইমাসে দুইটি প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রের উপরে সেসান আয়োজন করতে পেরে আমরা খুশী”। ডিসেম্বর মাসেও এই ধরণের প্রোগ্রাম আয়োজনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি স্পিকারবৃন্দ, স্পন্সর এবং আগত ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনারদেরকে ধন্যবাদ জানান।

প্রথমআলো ডটকমের আমিনুর রহমান তার সুচনা বক্তব্যে জানান যে, ‘যা কিছু ভাল, তার সাথে প্রথম আলো’ এই স্লোগানের ধারাবাহিকতায়ই প্রথম আলো ব্র্যান্ড পেশাজীবীদের জন্যে ট্রেইনিং এবং ওয়ার্কশপ আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। তিনি মনে করেন, প্রতিদ্বন্দ্ব্বীতায় ভরা এই যুগে টিকে থাকার জন্য ইনসাইট এবং কৌশলের কোন বিকল্প নেই।

ওয়ার্কশপে বিতরণ করা হয় ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট

ব্যান্ড প্র্যাক্টিসনার্স বাংলাদেশ গ্রুপের এডমিন মুহাম্মদ আবদুল্লাহ এই আয়োজনের সমাপনী বক্তব্যে আরও নতুন নতুন বিষয়ে সেমিনার এবং ওয়ার্কশপের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে ডিনারের আহবান জানান।

৬ ঘণ্টাব্যাপী প্রথম আলো ডটকম প্রেজেন্টস ‘বিজনেস অর ব্র্যান্ড’ ওয়ার্কশপে ৭৩ জন ব্র্যান্ড, মার্কেটিং ক্ষেত্রের পেশাজীবী এবং উদ্যোক্তা অংশ নেন। নলেজ পার্টনার হিসাবে এডস অফ বাংলাদেশ এবং ক্রিয়েটিভ পার্টনার হিসাবে বাযুকা কমিউনিকেশনস এই অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিল।

Share this article
Shareable URL
Prev Post

মার্কেটিং নামা ০৩ : ওয়ার্ড অফ মাউথ (Word of Mouth- WOM)

Next Post

মার্কেটিং নামা ০৪ : গেরিলা মার্কেটিং Guerrilla Marketing

Read next

Brand Practitioners Bangladesh Presents Brand Talk

বাংলাদেশের ব্র্যান্ড-মার্কেটিং পেশাজীবিদের ফেসবুক গ্রুপ ‘ব্র্যান্ড প্রাক্টিসনার্স বাংলাদেশ’ আগামী ০৩ মে ২০১৯…
0
Share